Rifat Ahmed | রিফাত আহমেদ

লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সি vs. গতানুগতিক ব্যাংকিং

লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সি vs. গতানুগতিক ব্যাংকিং

এই নিবন্ধটির পরিমার্জিত সংস্করণ বিজ্ঞানচিন্তার সেপ্টেম্বর ২০২২ সংখ্যায় ‘বিটকয়েনে সহজ লেনদেন‘ শীর্ষকে প্রকাশিত হয়।

 

ধরুন আপনি একটা বাড়ি কিনবেন। এর জন্য আপনাকে অবশ্যই খুব বড় একটা এমাউন্ট বিক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে, তাই না?

ছোটো কোনো এমাউন্ট লেনদেনের জন্য বিকাশের মতো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের অ্যাপস ও কার্ড ব্যবহার করা গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত নীতিমালার কারনে এরকম বড় এমাউন্টের জন্য এ মাধ্যমগুলো উপযোগী নয়।
এক্ষেত্রে বাড়িটি কেনার জন্য আপনি বিক্রেতাকে বাড়ির মূল্য ব্যাংক ডিপোজিট বা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে আপনাকে সশরীরে ব্যাংকের যেকোনো ব্রাঞ্চে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে বিক্রেতার একাউন্টের নাম, নম্বর ও অন্যান্য তথ্য দিতে হবে। সকল তথ্য যাচাইয়ের পর ব্যাংকের কর্মকর্তা বিক্রেতার একাউন্টে টাকাটা জমা করবেন।

চেকের ক্ষেত্রে ঝামেলাটা আরো বেশি। প্রথমত আপনাকে চেকটি বিক্রেতার কাছে পৌছাতে হবে। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিন্ন ভিন্ন শহরে অবস্থান করলে চেক হস্তান্তরের পুরো ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে দাঁড়াবে।
কোনোভাবে চেকটা বিক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারলেও বিক্রেতা সেই অর্থ নিজের একাউন্টে জমা করতে চাইলে তাকে ব্যাংকে যেতেই হবে।

উভয় ক্ষেত্রেই অর্থের এই লেনদেনের জন্য ক্রেতা বা বিক্রেতাকে সময় নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত থাকতে হবে। তাছাড়া ব্যাংকের দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে পৌছাতে পারলেও টাকাটা একাউন্টে জমা করতে পুরো প্রসেসটা সম্পন্ন করতে হবে ব্যাংকের অফিস আওয়ারের মধ্যে। এছাড়া ব্যাংকের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চাইলেও এই লেনদেন করা যাবে না।
অর্থাৎ লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার জন্য, সপ্তাহের সুনির্দিষ্ট দিনগুলোতে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতা বা বিক্রেতা ও ক্ষেত্রবিশেষে উভয়কেই ব্যাংকে সশরীরে উপস্থিত থেকে অর্থের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে বিক্রেতা অন্য কোনো দেশের নাগরিক হলে ঝামেলাটা আরো বেশি। ধরুন আপনি ভারতে একটি বাড়ি কিনছেন এবং বাড়ির মূল্য সেই বাড়িটির বর্তমান মালিক একজন ভারতীয় নাগরিক-কে পাঠাতে চাচ্ছেন। এই লেনদেন দুই দেশের ব্যাংকের মধ্যে স্যাটেল করতে আপনাকে অনেক আইনি জটিলতা পার করে টাকাটা পাঠাতে হবে। সরকার ও ব্যাংকে থেকে সকল প্রকার অনুমতি ব্যাতিত আপনার কাছে বা একাউন্টে যথেষ্ট পরিমান টাকা থাকলেও তা পাঠাতে পারবেন না।
সকল প্রকার অনুমতি নেয়ার পর আপনার ব্যাংক জমাকৃত অর্থ রিজার্ভে রেখে তার সমপরিমান মার্কিন ডলার ভারতীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। পরবর্তীতে ভারতীয় ঐ ব্যাংকটি প্রাপ্ত মার্কিন ডলারগুলোকে ভারতীয় রুপিতে কনভার্ট করে বিক্রেতার একাউন্টে জমা করবেন। পুরো এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

তবে ঝামেলাগুলো খুব সহজেই এড়ানো যাবে যদি এই লেনদেনটা বিটকয়েন বা ইথিরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে করা হয়। বিকাশ, নগদ, রকেট বা যেকোনো অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মের মতোই ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের জন্য রয়েছে কয়েনবেজ ও বাইন্যান্সের মতো ক্রিপ্টো ওয়ালেট অ্যাপ। এই ক্রিপ্টো ওয়ালেটগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে, দিনের যেকোনো সময়েই লেনদেন করা যাবে যে কারো সাথেই। প্রাপক যে দেশেরই হোক না কেনো আর অর্থের পরিমানটা যত ছোটো বা বড় হোক না কেনো, মুহূর্তের মধ্যেই তা পৌঁছে যাবে প্রাপকের ওয়ালেটে।
তাছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের এই রেকর্ডগুলো সংরক্ষিত থাকবে ব্লকচেইনে যা গতানুগতিক ব্যাংক সার্ভারের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত। ফলে লেনদেন হবে আরো ঝুঁকিমুক্ত।

এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন করলে শতবর্ষ পুরোনো কাগজের দলিলে তথ্য লিপিবদ্ধ রাখার প্রথা থেকেও মুক্তি মিলবে। এক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার সময় এনএফটি বা নন-ফাঞ্জিবল টোকেন ব্যবহার করতে হবে। এনএফটি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে বাড়িটি বেচা-কেনা করলে বাড়ির পুরোনো মালিক বা বিক্রেতা ও বর্তমান মালিক বা ক্রেতার তথ্য থেকে শুরু করে লেনদেন ও বাড়িটির বর্তমান হাল-দশা সব কিছুই লিপবদ্ধ থাকবে ব্লকচেইনে। মূলত লেনদেন থেকে শুরু করে মালিকানা সমস্ত তথ্যাদি সংরক্ষণ, এ সবকিছুই সহজ হবে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারে।

 

এই নিবন্ধটির পরিমার্জিত সংস্করণ বিজ্ঞানচিন্তার সেপ্টেম্বর ২০২২ সংখ্যায় 'বিটকয়েনে সহজ লেনদেন' শীর্ষকে প্রকাশিত হয়।

I'd love to know your thoughts...

Scroll to Top