বাংলাদেশে সরকারী কাজের গ্রাহক পর্যায়ে যেসব জটিলতা আছে তা দূর করার সক্ষমতা এ দেশের আছে।
তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন, সরকারি কাজে এত জটিলতা কেন? আমাদের দেশে কি মেধার এতই অভাব?
না, আমাদের দেশে মেধা এবং মেধাবীর কোনো সংকট নেই। সরকারি দপ্তরগুলো চাইলে কাল থেকেই সকল কাজ অনলাইনের মাধ্যমে কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়াই সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে পারবে। এরকম মেধা এবং রিসোর্স এদেশের আছে।
তবে সমস্যাটা হলো — দিনশেষে টাকার কাছে গিয়ে সবাই হেরে যায়; মেধাবীরাও।
আজ একটা কাজে মিরপুর বিআরটিএ-তে গিয়েছিলাম। বাইরের একটা কম্পিউটারে দোকানে বসে কিছু কাজ করিয়ে নিচ্ছিলাম। এমন সময় একজন গ্রাহক এসে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলো “ভাই, এপয়েন্টমেন্টর জন্য ঐটা (কোনো একটা ছবি কিংবা কাগজ বুঝাচ্ছিলো) কী অনলাইনে জমা দেয়া লাগবে?”
লোকটি দোকানির পরিচিত ছিল। উনি গাড়ির ফিটনেস অথবা লাইসেন্সের পরীক্ষার অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর কথা বলতেছিলো, সেটা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু কোন ডকুমেন্টের কথা বলছিল সেটা খেয়াল করি নাই।
যাই হোক, প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে দোকানি বলে উঠলো, “দেয়া লাগবে মানে? মাসে মাসে টাকা দেই এইটা চালু রাখার জন্য। এইটা বন্ধ কইরা দিলে তো বিআরটিএ বন্ধ কইরা দিমু। যেইদিন এইটা বন্ধ করে দিবো সেইদিন মিরপুর বিআরটিএ-র গেটে তালা মাইরা দিমু।”
অর্থাৎ ওই এলাকা বা দেশ জুড়ে যেসব দোকান বা লোক বিআরটিএ-এর কাজ গুলো করে তারা সবাই মিলে মাসে মাসে টাকা দিয়ে সিস্টেমটাকে অনর্থক জটিল করে রাখতেছে। এতে টাকা পাচ্ছে দপ্তরগুলোর সরকারি কর্মকর্তারা, লাভবান হচ্ছে দালাল-দোকানগুলো আর বিনা প্রয়োজনে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে সমগ্র দেশের মানুষ।
এর আরেকটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময় মেডিকেল রিপোর্ট।
এই রিপোর্টটা দুনিয়ার কোনো কাজে আসে না বা কেউ চেক করে না। তবে লাইসেন্স বানাতে হলে সেটা লাগবেই। এটা আপলোড না হলে লাইসেন্সের আবেদন করা যাবে না।
এই অপ্রয়োজনীয় কাগজটা না লাগলে দেশের শতভাগ মানুষ নিজের ফোন থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিজে নিজে বানাতে পারবে। কিন্তু এই একটা অপ্রয়োজনীয় কাগজের জন্য সবাইকে এই দোকানগুলোর দারস্থ হতে হয়।
এমন না যে দোকানিরা একটা একচ্যুয়াল মেডিকেল রিপোর্ট বানিয়ে দিচ্ছে যা দ্বারা বিআরটিএ-এর কর্মকর্তা প্রার্থীর শারীরিক সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হচ্ছে। না এমন কিছুই না। তারা সাইন-সিল সহ বানানো একটা মেডিকেল রিপোর্টে শুধু ছবিটা বসিয়ে দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে। নামটাও বসাচ্ছে না ফর্মে কারন তারাও জানে এটা আপলোড করার পর এর কোনো কাজ নাই। কেউ ওভাবে যাচাই বাছাই করবে না।
আমার মনে হয় না সেই রিপোর্টে আমার ছবির বদলে রাস্তার একটা কুকুরের ছবি বসিয়ে আপলোড করলেও সেটা ধরা পড়বে। দোকানিদের ভাষ্যমতে এর কাজ আপলোড হওয়া পর্যন্তই।
তবে এই একটা রিপোর্টে দিয়েই এই দালালগুলো জিম্মি করে রাখতেছে পুরো দেশটাকে আর টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতেছে পুরো বিআরটিএ-এর।
আর সেই বিআরটিএ-এর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিত্বও বা কি রকম?
এত পড়ালেখা করে ৭ম, ৮ম, ৯ম গ্রেডের পদে অধীনস্থ থেকেও এরকম শিক্ষা-জ্ঞানহীন দালালদের সামনে শুধুমাত্র টাকার লোভে জি হুজুরি করেছে তারা। কি লাভ এই শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পদমর্যাদার যদি দালালরাই আপনার অফিস খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে সেটা নির্ধারণ করে দেয়? কেমন নীতি নির্ধারক আপনি যদি আপনার দপ্তরের নীতি দালালদের কথায় নির্ধারিত হয়?
এরকম ব্যক্তিত্বহীন কর্মজীবনের চেয়ে রিক্সা চালিয়ে খাওয়াও অধিক সম্মানের বলে আমি মনে করি।