টাইটান, শনির সবচেয়ে বৃহৎ চাঁদটিতেই হতে পারে নতুন জীবনের সূচনা – এমনটাই ধারণা করে আসছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে।
আমাদের সৌরজগতে একমাত্র টাইটানেই আছে পৃথিবীর মতো সমুদ্রতুল্য বিশাল পানির স্তর ও জৈব হাইড্রোকার্বন। কিন্তু এই হাইড্রোকার্বন আর পানির স্তরের মধ্যে আছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পুরু একটি বরফের স্তর। এজন্যই এতদিন টাইটানে প্রাণের সঞ্চার নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিল সায়েন্টিফিক কমিউনিটি।
কিন্তু নতুন এক গবেষনায় ধারণা করা হচ্ছে যে প্রায় এক বিলিয়ন বছর আগে উল্কাপিণ্ড বা গ্রহাণুপুঞ্জ ধেয়ে এসেছিল টাইটানের বুকে যা শত কিলোমিটার পুরু বরফের স্তর ভেঙ্গে পানির স্তরকে নিয়ে আসে পৃষ্ঠতলে। উপড়ে উঠে আসা এই পানির স্তরের সংস্পর্শে আসে জৈব হাইড্রোকার্বন এবং এই দুই স্তরের মিশ্রণ-ই ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন প্রাণের সূচনার।
ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিসের টাইটান বিশেষজ্ঞ এবং গ্রহ বিজ্ঞানী লে বনেফয়ের মতে পৃষ্টতলে উঠে আসা এই উষ্ণ পানি এবং এর সংস্পর্শে আসা হাইড্রোকার্বন প্রাণের সঞ্চারণের জন্য উপযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
এমনটাই হয়েছে বলে ধারণা করছেন আরো অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের মধ্যে একজন হলেন ক্রোস্তা। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যাম্পিনাসের ভূবিজ্ঞানী আল্ভারো পেন্তিয়াদো ক্রোস্তা ও তার সহযোগী দল টাইটানে ১ বিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া গ্রহাণুপুঞ্জের আঘাতের একটি মডেল তৈরি করেন এবং উপস্থাপন করেন এবছর মার্চে ৫২তম লুনার এন্ড প্লানেটারি সায়েন্স কনফারেন্সে। সেই মডেল অনুযায়ী প্রায় এক বিলিয়ন বছর আগে যেই গ্রহাণু আঘাত হানে শনির চাঁদে, তা থেকে নির্গত তাপ নিঃসন্দে টাইটানের পুরু বরফ স্তর ভেদ করতে সম্ভব। পেন্তিয়াদো ক্রোস্তার মতে হয়তো এক বিলিয়ন বছর আগেই সেই উষ্ণ পানিতে জন্ম নিয়েছিল আদি কোষীয় ব্যাক্টেরিয়া যা এখনো থেকে যেতে পারে বরফ হয়ে জমে যাওয়া সেই পানির মধ্যে।
টাইটানের সর্ববৃহৎ ৪২৫ কিলোমিটার চওড়া মেনরভা নামক এই খাদটি ছাড়াও শনির এই চাঁদে রয়েছে আরো অনেক ছোটো ছোটো গর্ত যার যেকোনো একটি একই কারনে হতে পারে নতুন প্রাণের সূচনা স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেল্ক। অনেকের মতে বরফে জমে থাকা ফসিলাইজড ব্যাক্টেরিয়া পাওয়ার সম্ভাবনা মিনারভা থেকে সেল্কে বেশি কেননা সেল্কে গ্রহাণুপুঞ্জের আঘাত অপেক্ষাকৃত নতুন।
যদিও গবেষক দলটি এ বিষয়ে আশাবাদি, শতভাগ নিচ্ছিত হতে দলটিকে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত যখন ২০২৭-এ ছেড়ে আসা নাসার ড্রাগনফ্লাই মিশনের ড্রোনটি গিয়ে পৌঁছাবে টাইটানের গাঁয়ে ৯০ কিলোমিটার চওড়া খাদ সেল্কে।