মুম্বাই এয়ারপোর্টে ২৩ ঘন্টার লেওভার ছিল। জুহু বিচ, গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া, শাহরুখ খানের বাড়ি, মুম্বাইয়ের সমুদ্রতট — সব ঘোরা শেষ। কোনো কাজ নেই হাতে তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ইমিগ্রেশন পার করে এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি শপ গুলোর সামনে পায়চারী করতেছিলাম।
হঠাৎ দেখলাম আমার বয়সী একজন ভদ্রলোক দূর থেকে আমাকে “ভাই ছাহাব” বলে ডাক দিলেন। কাছে গিয়ে উনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বুঝে গেলাম বেচারা এয়ারপোর্টের পথ ঘাট কিছু চিনতেছে না।
ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে অনেক কষ্ট করে কোন পথে যাবে খুঁজে পাচ্ছে না এই কথাটুকুই বোঝাতে পারলেন।
সদ্য তামিল নাড়ু প্রদেশ থেকে আসলাম। চেন্নাই শহরের লোকজন রোদে পোড়া মাটির মতোই কালো। ওখানে লোকালরা হিন্দি ভালো বুঝে না। হিন্দির চেয়ে তারা বরং ইংরেজি ভালো বলতে পারে।
গায়ের বর্ন আর হিন্দি বলার ধরন দেখে একজন খাটি রেসিস্টের মতো উনাকে তামিল বলেই ধরে নিলাম। উনাকে দেখে উনি ইংরেজি পারবেন বলেও মনে হচ্ছিল না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হিন্দিতে কথা বার্তা শুরু হলো।
অনেক কষ্ট করে উনি ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বোঝালেন যে উনার বোর্ডিং পাসে গেট নাম্বার দেয়া নাই। এখন তিনি ইমিগ্রেশনও পার করে ফেলেছেন। তাই কাউন্টারে ফিরে গিয়ে গেট নম্বর জেনে আসাও সম্ভব নয়।
একজন ফ্রিকুয়েন্ট ট্রাভেলারের ভান ধরে আমিও হিন্দিতে বেশ কড়া করে জিজ্ঞেস করলাম এত কেয়ারলেস কিভাবে হলেন তিনি। তার তো সিকিউরিটি চেকে ঢোকার আগেই গেটের নাম্বার জিজ্ঞেস করে আসা উচিত ছিল। মুম্বাই এয়ারপোর্ট এমনিতেই বিশাল। টার্মিনাল ১ থেকে টার্মিনাল ২ এ হেঁটে যেতে প্রায় ৩৫ মিনিট লাগে। শুধু এই টার্মিনাল ২-এই গেট আছে ৮০ পর্যন্ত। কয়টা গেটে আপনি এভাবে ঘুরে ঘুরে জিজ্ঞেস করবেন? এয়ারলাইন্সের কোনো স্টাফকে খুঁজে না পেলে ফ্লাইট তো মিস হয়ে যাবে। এসব কথা হিন্দিতেই বলছিলাম উনাকে।
তার যে বুঝতে ও বলতে কষ্ট হচ্ছিল সেটাও দেখা যাচ্ছিল চোখে মুখে। ইংরেজি উনি বুঝবেন না সেটাও আন্দাজ করতে পারছিলাম।
ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে দুইজনের এই কথা বার্তা অনেকক্ষণ চললো। তারপর উনার কাছে উনার বোর্ডিং পাস দেখতে চাইলাম। সেখান থেকে পিএনআর দিয়ে অনলাইনে আইটিনেনারি চেক করে গেট নাম্বার খুঁজবো বলে। না পেলে অন্তত ওখান থেকে এয়ারলাইন্সের নাম্বার নিয়ে ফোন করে খোঁজ নিবো সে আশায় উনার বোর্ডিং পাস নিলাম।
বোর্ডিং হাতে নিয়ে দেখি ভদ্রলোক আমার ফ্লাইটেই ঢাকা যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, আপনি কী বাংলাদেশি?”
ভদ্রলোক: “দূর মিয়া, ভয় লাগাই দিছিলেন। আমি তো মনে করছিলাম কি না কি করে ফেলছি, আজকে মনে হয় দেশেই যাইতে পারুম না।”
দুজনই হাসতে হাসতে শেষ।