Rifat Ahmed | রিফাত আহমেদ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা কি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা কি?

অনেকে মনে করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনি একরকম সরকারি খরচে পড়ছেন বা সরকার উল্টো আপনার পিছনে খরচ করছে – এজন্যই হয়তোবা সবার ঝোক পাবলিকের দিকে বেশি। এজন্যই হয়তোবা মুরব্বিরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তাগিদ দেন।
ধারনাটা ঠিক না। আমি বলছি কেন সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। তার আগে আমার সাথে হওয়া ছোটো তিনটা ঘটনা বলে নেই, তাহলে আমার পয়েন্টটা বুঝতে সুবিধা হবে।

 

ঘটনা ১ঃ

গত বছরের কথা। ঢাকায় আব্বুর একটা প্রয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে যাই।
সরকারি ব্যাংক, ব্যবহার কেমন সেটা আমার আগে থেকেই ধারনা ছিল। তাই এক্সপেকটেশনও কম ছিল।
বয়োজ্যেষ্ঠ ম্যানেজারের চেম্বারে গিয়ে বসলাম। অন্য সবার সাথে যেমন ব্যাবহার হয় ঠিক সেরকমই চলছিল।
কোনোরকম কথা সংক্ষিপ্ত করে শেষ করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু কথা প্রসঙ্গে উনি জিজ্ঞেস করে বসলেন আমি কোথায় পড়াশুনা করি।
আমি বললাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গনিত বিভাগে আছি।
ব্যস, শুরু হলো খোশ গল্প। জানতে পারলাম উনিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক ছাত্র।
যে ব্যাক্তি এতক্ষণ আমার কথায় একজন সরকারি কর্মকর্তার মতো কোনো ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছিলেন না, সে হঠাত আমার সাথে তার কেবিনে বসে চা খাচ্ছেন আর ভার্সিটির কথা স্মরণ করছেন। এর পর থেকে কোনো কাজে তাকে কল করলেও সে কল কেটে নিজে কল করে জিজ্ঞেস করেন “আঙ্কেল কেমন আছেন?”

 

ঘটনা ২ঃ

ভার্সিটিতে তখন নতুন ভর্তি হয়েছি। ঢাকায় এসেছিলাম ছুটিতে। একটা কাজে জাতীয় শিক্ষাবোর্ডে গেলাম পরের দিন। সরকারি অফিসে যেরকম পরিবেশ, তেমনই ছিল ভিতরটা।
একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম। কিন্তু কথায় কোনো কাজ হচ্ছিল না। সে আমাকে কোনো রকম ইনফরমেশন দিচ্ছিল না।
কেনই বা দিবে, এতে তার কি লাভ? তার উপর উনার টেবিলে ১০১ টা ফাইল। ফাইলের প্রেশারে আছে বুঝতে পারছিলাম।
কথা প্রসঙ্গে বললাম কাজটা আমার তাড়াতাড়ি শেষ করা লাগবে, পরশু দিনই চট্টগ্রাম চলে যাবো।
তার প্রশ্নের উত্তরে আমার পরিচয় দিলাম। বললাম ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হবে শীঘ্রই।
ব্যাস, ফাইল রেখে শুরু করলেন গল্প। আমার কাজটা কিভাবে করতে হবে সেটা তো বলে দিলেনই, আরো লাঞ্চ করে যাওয়ার জোর করলেন।

 

ঘটনা ৩ঃ

গতকাল ভাটিয়ারি থেকে খুব টায়ার্ড হয়ে বাসায় আসছিলাম।
রাস্তায় ডাচ বাংলা ব্যাংক দেখে রিক্সা থেকে নেমে গেলাম। বাই মেইল একটা কার্ড এসেছিল সেটা এক্টিভেট করতে চেয়েছিলাম।
অর্থ বছরের শেষ দিন বলে ব্যাংকে সবাই একটু বেশি বিজি ছিলেন।
আমাকে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হলো। একটু পড় ডাক পেলাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমার একাউন্ট ঢাকায় আর আমি এক্টিভেট করতে আসছি চট্টগ্রামের এক শাখায়। তার উপর আমার ছবির সাথে চেহারার কোনো মিল নেই। ব্যাংক একাউন্ট সম্ভবত ৫-৬ বছর আগে করা হয়েছিল তাই ছবির সাথে তেমন কোনো মিল নাই। এতদিন একাউন্টের কোনো সমস্যার জন্য ব্যাংকে আসা লাগে নাই বলে ছবি আপডেট করা হয় নি, সব সমস্যা সাপোর্টে মেইল করেই সল্ভ পেতাম।
যেহেতু ছবি মিলছে না তাই ভদ্রমহিলা কার্ডটা এক্টিভ করে দিবেন না। বললেন, ঢাকায় গিয়ে নিজ ব্রাঞ্চে গিয়ে এক্টিভ করতে হবে ও ছবি আপডেট করতে হবে।
এটা আমার প্রাইমারি একাউন্ট, বেশিরভাগ লেনদেন এই একাউন্ট দিয়েই করি। তাই কার্ডটা এক্টিভ না হলে সমস্যায় পড়ে যাবো – এটা চিন্তা করতে করতে চলে আসবো ঠিক এসময় কথায় কথায় উঠে আসলো আমার পরিচয়।
ব্যাস্, ম্যাম শুরু করলেন ডিপার্টমেন্টের কথা। উনিও আমার ডিপার্টমেন্টের। জিজ্ঞেস করলেন স্যারদের কথা, জ্যাক স্যার এখনো আছে কিনা, নিল রতন স্যার কোন সাবজেক্ট নেয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
শেষমেষ আমার কাজটা উনি নিজেই করে দিলেন।

 

এই পরিচয়টাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবিধা এবং আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা এজন্যই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি এতটা দুর্বল। আমার সাথে যেরকম ঘটনাগুলো হয়েছে, তারাও সেগুলো দেখেছেন। গতকাল ব্যাংকে আমার পাশে থাকা যে ব্যবসায়ী লোকটা বসেছিলেন, সেও হয়তোবা চিন্তা করেছেন আজ সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হয়তো সামান্য একটা চেকবুক কালেক্ট করার জন্য তাকে হয়তো এতটা হেনস্তা হতে হতো না
সরকারি অফিস ও ব্যাংক থেকে বেসরকারি অফিস ও ব্যাংকে এমন আরো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে গত দুই বছরে আমার সাথে যা লিখে শেষ করতে পারবো না।
তাই আমার মতে আবাসিক হল সুবিধা, ২০ টাকায় ভার্সিটিতে লাঞ্চ/ডিনার, সরকারি খরচে পড়া, ভালো টিউশনি পাওয়া – এগুলার চেয়ে ভার্সিটির এলামনাইদের খাতির ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা বলে মনে হয়।

2 thoughts on “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা কি?”

I'd love to know your thoughts...

Scroll to Top