২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ঘটনা।
সন্ধ্যা হবে হবে এমন সময়টায় ফোন পেলাম যে নানী আর নেই। কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম বাস কাউন্টারে।
দামপাড়া বাসস্ট্যান্ডে কয়েকটা কাউন্টার খুঁজে খুঁজে একটা বাসের সন্ধান পেলাম যেটা ৬.৩০ এ রওনা করবে। পিছনের দিকে একটা সিট পেয়ে উঠে গেলাম। মাথায় তখন চিন্তা একটাই, নানীর জানাজায় শরিক হতে পারবো তো?
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, তারপর ঢাকা থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর নানী বাড়ি যেতে হবে। অনেক দুরের পথ।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে টুকটাক জ্যামের মুখে পড়তে হলো। তাই ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত প্রায় ১ টা। গুলিস্তানে তাড়াহুড়ো করে নেমে মাওয়া যাবার বাস খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু এই সময়ে কোনো বাস মাওয়া ছেঁড়ে যায় না। বংশাল রোডে দূর থেকে একটা বাস খেয়াল করলাম। বাসের ইঞ্জিন চলতেছে। তাই কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
একদল ছেলে মাওয়া যাচ্ছে ইলিশ খেতে তাই এই ভাঙ্গাচুরা লোকাল বাসটি যাচ্ছে ওইদিকে। চিন্তা ভাবনা না করে উঠে গেলাম।
মাওয়ার রাস্তায় এতটাই কুয়াশা ছিল যে বাস মাঝে মাঝে ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে থেমে থেমে আগাচ্ছিলো। রাত দুটোর দিকে মাওয়া ঘাটের আগে ইলিশ মাছের দোকানগুলোর সামনে বাসটি এসে থামলো। বাস নাকি আর সামনে যাবে না। লঞ্চ আর সি বোট বন্ধ, শুধু ফেরি ঘাট সচল। কিন্তু এখান থেকে ফেরি ঘাট অনেক দূরে।
হেঁটে কিছু দূর আগালেও খুব তাড়াতাড়ি-ই বুঝে ফেলছিলাম যে এই কুয়াশাতে হেঁটে অতদূর যাওয়া যাবে না। তাছাড়া ফেরি ঘাটের রাস্তাও ঠিক চিনি না। ঠিক কত বছর আগে ফেরিতে পার হয়েছিলাম তাও মনে নেই। তখন পদ্মার এপার-ওপার এই শিমুলিয়া-পাটুরিয়া ঘাট ছিল না। ছিল মাওয়া-কাওরাকান্দি ঘাট।
তাই অনেক খুঁজে ফেরী ঘাট পর্যন্ত একটা অটোরিক্সা ঠিক করলাম। এক কিলোর কম পথ কিন্তু সময়, কুয়াশা ও রাস্তার সুযোগ বুঝে চালক ১৫০ টাকা চেয়ে বসলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরি ধরতে হবে তাই কোনো পথ না পেয়ে চড়ে বসলাম।
১ নং ফেরি ঘাটে গিয়ে কিছু মানুষের সন্ধান হলো। কিন্তু গিয়ে শুনি প্রচন্ড কুয়াশা, বাতাস ও নদীর স্রোতের কারনে ঘাট বন্ধ। ফেরি পার হবে না।
আশে পাশে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে খবর পেলাম ৩ নং ঘাট থেকে একটা ফেরি ছেড়ে যাবে। একরকম দ্রুত গতিতেই ছুটে চললাম ফেরিটি ধরার জন্য।
হ্যা ঠিকই, গাড়ি দিয়ে ছোট্ট ফেরিটি প্রায় ভরে গেছে। আর দুটো বাস উঠলেই ছেঁড়ে দিবে এমন অবস্থা।
সময় অপচয় না করে ফেরিতে উঠলাম।
যেহেতু ছোট্ট ফেরি তাই ঐ বড় ফেরিগুলোর মতো সুবিশাল ক্যান্টিন নেই। নিচে বসার কোনো ব্যবস্থাও নেই।
এরই মধ্যে শুনতে পেলাম ফেরিটা এখন ছাড়বে না। কুয়াশা কমলে আর আবহাওয়া একটু ভালো হলে ছাড়বে।
যেহেতু ফেরি এইটা ফুল তাই চলাচলের অবস্থা হলে এটাই সবার আগে ছাড়বে সেই বিশ্বাস নিয়ে পিঠ ঠেকাবার একটা জায়গা খুঁজতেছিলাম পুরো ফেরিতে। কোথাও কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে অবশেষে একদম উপরে ছাদে উঠলাম। পুরো ছাদে আমি একা। কোনো মানুষ নেই ফেরিতে, শুধু গাড়ির যাত্রীরা ঘুমাচ্ছে যার যার গাড়িতে।
যদিও ছাদের মতো উপরের প্ল্যাটফর্মে একটা শেড দেয়া আছে, কিন্তু সেটা এই শীত থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট নয়। ফেরি ছেড়ে কোথাও যেতেও পারছিলাম না এই ভয়ে যে আবহাওয়ার উন্নতি হলে ফেরিটা যেকোনো সময়েই হয়তো ছেঁড়ে দিতে পারে।
বরফের মতো ঠাণ্ডা বাতাস আর তার উপর কুয়াশা এতটাই ঘন ছিল যে ঘাটে বাধা ফেরি থেকে ঘাট দেখা যাচ্ছিল না। সেদিন সকাল প্রায় সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এই আবহাওয়া ছিল।
সেদিনের সেই রাতে আমি টের পেয়েছি পদ্মা কতটা ভয়ংকর।
চট্টগ্রাম থেকে তাড়াহুড়ো করে আসার সময় ভারি শীতের কাপড়ও আনতে ভুলে গেছি। বাসায় এক গ্লাস কোক দশ কিউব বরফ দিয়ে খাওয়া আমি একটু গরমের আশায় ফেরির ইঞ্জিন রুমের ছিদ্রের পাশে ফ্লোরে জড়সড় হয়ে বসেছিলাম ইঞ্জিন রুম থেকে একটু গরম বাতাসের আশায়।
ঠান্ডা বাতাসে জমতে যাওয়া হাতের তালু পাতলা শার্টের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে সে রাতে খোদার কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা করতেছিলাম। আল্লাহ, আজ এক রাতের জন্য হলেও পদ্মায় একটা ব্রীজ বানিয়ে দাও।
পদ্মা সেতু এরকম শত সহস্র প্রার্থনার ফল।
এই পদ্মা ব্রীজ কে করলো এতে আমার কিছু আসে যায় না। কে সমালোচনা করলো সেটাও আমার দেখার এত আগ্রহ নাই। লোন নিয়ে করেছি নাকি নিজের টাকায়, সেটা হিসেব করারও এনার্জি নাই। আমি শুধু পদ্মায় একটা ব্রিজ চাইছিলাম সেদিন, সেটা পেয়ে গেছি। উপরওয়ালার কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া এর জন্য।
The Padma Multipurpose Bridge is a multipurpose road-rail bridge across the Padma River, the main distributary of the Ganges, in Bangladesh. It connects to Shariatpur and Madaripur, linking the southwest of the country, to the northern and eastern regions. The bridge was inaugurated on 25 June 2022. Once the bridge is operational, another Kolkata-Dhaka International train via Mawa, Goalando, Faridpur, Kushthia, Poradaho, Darshana & Gede may be introduced.
Pingback: June 2022 — Tragedy, Prayers, Academic Hellhole, Quarter of a Century & NFT Giveaway – Rifat Ahmed