ইদানিং আশেপাশের লোকজনের কথা-বার্তা ও অঙ্গ ভঙ্গি দেখে মনে হতো বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, নিত্যপণ্যের চড়া দাম, চুরি-ডাকাতি, খুন, লুট, ঘুষ, সুদ সহ সকল বৈশ্বিক সমস্যার মূল আমার বাবরি চুল।
লোকজনের দুঃখ কষ্ট ও বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর কথা চিন্তা করে কয়েক মাসের জন্য দুনিয়াটাকে ও এতে বসবাসরত খেটে খাওয়া মানুষদের একটু বিশ্রাম দিবো বলে মনস্থির করলাম। সকলের কল্যাণার্থে গতকাল এক নাপিতের কাছে চুলগুলো বিসর্জন দিয়ে আসলাম।
মনে মনে খুব খুশি লাগছিল এই ভেবে যে কাল ঘুম থেকে উঠলেই দেখবো এই দুনিয়ার সকল দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যা আমার চুলের বিসর্জনে বিলীন হয়ে গেছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তাই তড়িঘড়ি করে পত্রিকায় খুশির সংবাদ গুলো খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু একি? নিত্যপণ্যের দাম তো কমে নাই। রাশিয়া-ইউক্রেনের কোনো মীমাংসাও তো হলো না। ডলারের দাম খোলা বাজারে আজও বেশি। রোজকার খুন-খারাবি ও দুর্নীতির খবর তো আছেই।
নিরাশ হয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গত পরীক্ষার কথা মনে পড়লো।
গত পরীক্ষায় এক স্যারও চুল ছোট করার উপদেশ দিয়েছিলেন। শিক্ষক মহোদয় জ্ঞানী মানুষ। উনি অবশ্যই কোনো লজিক্যাল কারণেই চুল ছোটো রাখতে বলেছেন।
মনে মনে ভাবলাম বৈশ্বিক ও জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান যেহেতু হয় নি, ব্যক্তিগত সমস্যা গুলোর সমাধান নিশ্চয়ই হয়েছে।
খুব জোস নিয়ে ফ্লুইড মেকানিক্সের কেতাব খুলে পড়তে বসে গেলাম। কিন্তু আগের মতোই ইউনিফর্ম ডেনসিটির ফ্লুইডের স্টেডি ইরোটেশনাল নোশনের জন্য বার্নোলির ইকুয়েশন বের করতে গিয়ে একটা ফিক্সড আর একটা মুভিং প্লেটের মধ্যকার ক্যুট ফ্লো ভুলে যাচ্ছি। ক্যুট ফ্লো মনে রাখতে গেলে ভিস্কাস ইনকম্প্রিসিবল ফ্লুইডের জন্য নেভিয়ার-স্ট্রোকস ইকুয়েশন ভুলে যাচ্ছি।
ব্যাংক একাউন্ট চেক করতে গেলাম। হয়তোবা আমার দৈন্যদশা দূর করার জন্য কোথাও থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আমার একাউন্টে জমা হইছে? কিন্তু না। সেটাও হয়নি।
দরজার পাশে গিয়ে নিজের হাইট মাপলাম। কই লম্বাও তো হলাম না।
পুনরায় নিরাশার সমুদ্রে ভেসে ভেসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলাম। দ্বিতীয় চুমুকেই আব্বুর কথা মনে পড়লো।
আব্বু প্রতিবার ফোনে স্মরণ করিয়ে দিতেন যে চুল ছোটো রাখলে আমাকে দেখতে ভালো লাগবে।
শেষ ভরসা হিসেবে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিশ্চয়ই নিজেকে খুব সুদর্শন পুরুষের মতো লাগবে।
কিন্তু না, আমার চোখে তেমন পার্থক্য পরিলক্ষিত হলো না। তবে তানভীর পিছন থেকে ঠিকই চুল ছোট করার পর থেকে আমাকে যে দেখতে যুবতী মেয়ের মতো মনে হচ্ছে-এ কথাটা জানিয়ে দিলো।
হতাশার সমুদ্রে ডুবতে যাচ্ছি ঠিক এমন সময় পরম সিদ্ধি লাভ হলো। সবকিছু চোখের সামনে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে লাগলো। দৈববাক্য কানে এলো।
“তোর চুল ছোটো না বড় এতে দুনিয়ার কারোরই কোনো *ল টাও যায় আসে না।”
Pingback: August 2022 – Do I Overshare? – Rifat Ahmed