আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ আর আন্দোলনের পর সংখ্যালঘু।
আন্দোলন যখন তীব্র, দেশে যখন ছাত্ররা মরতে শুরু করেছে, তখনই বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আন্দোলন কারীদের “নব্য রাজাকার”, “রাষ্ট্র দ্রোহী” বলে আখ্যায়িত করে এবং এটাও দাবী করে যে আন্দোলনেরকারীরা যেন কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরি না পায়। আমার বানানো কথা না। প্রথম আলোতে সরাসরি তাদের বিবৃতির সোর্সঃ https://www.prothomalo.com/bangladesh/y9665rk2se
এমনকি অনেকে এক্টিভলি ছাত্রদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। সবাই না, একটা অংশবিশেষ যারা সরকারের পদলেহন করে সুবিধা নিতে চাচ্ছিলো। আমার স্কুলের কিছু হিন্দু বন্ধুদের অনেক বেশি ভোক্যাল দেখেছি এই পুরো আন্দোলন জুড়ে। তারা প্রথম থেকেই ছাত্রদের, দেশের পক্ষে ছিল। কিন্তু এদের বাইরেও বেশ কিছু মাইনোরিটির এক্টিভিস্ট ছিল যারা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড এবং পুরো সময়টাতেই সরকার পন্থী ছিল। এখন আন্দোলনের পরে যখন তাদের সেই অবস্থানের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাসা বাড়িতে ভাঙচুর শুরু হয়, ঠিক যেমনট হচ্ছিল মুসলিম আওয়ামী নেতাদের বাড়িতে, সেটাকে তারা চালিয়ে দিয়েছে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমন হিসেবে। ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া গোষ্ঠী এখন সিম্প্যাথির জন্য সংখ্যালঘুর ট্যাগ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। গুজব ছড়াচ্ছে গনহত্যার এবং গন ধর্ষণের।
ভারতের মিডিয়া এবং এদেশে ভারতের দালালরা খুব জোরে সোরে এগুলো নিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছে। মাশরাফির বাড়ি পোড়ানোর ঘটনাকে লিটনের বলে চালিয়ে দেয়া, সরকার দলীয় নেতার হোটেল পোড়ানোকে মন্দির বলে চালিয়ে দেয়া, কয়েক বছর আগে খোদ ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে হওয়া এক গন ধর্ষণকে আমাদের দেশে হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচার হিসেবে চালিয়ে দেয়া, আওয়ামী নেতার মৃতদেহ অরাজনৈতিক হিন্দুলোকের বলে চালিয়ে দেয়া, চোরকে আর্মিদের দেয়া শাস্তিকে দেশে হিন্দুর বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন বলে চালিয়ে দেয়া, গত পরশু গোপালগঞ্জে আর্মির গাড়ি বহর যাওয়াকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিলিটারি আক্রমন বলে চালিয়ে দেয়া — এরকম আরো অসংখ্য ‘চালিয়ে দেয়া’র ঘটনা ঘটেছে বিগত কয়েকদিনে।
এই সব চালিয়ে দেয়া নিউজের মাঝে ঢাকা পড়ে গেছে গুটি কয়েক সত্য ঘটনা যেখানে আসলেই এই দাঙ্গার মাঝখানে বেশি কিছু হিন্দুদের বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট, মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখানে কিছু সাম্প্রদায়িক ভাংচুরও আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দেয়া বিবৃতিকে কেন্দ্র করে। তবে এসব ভাঙচুরের অধিকাংশই করেছে আওয়ামী লীগ। অসংখ্য ভেরিফাইড নিউজ আছে এ নিয়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং অন্যান্য মিডিয়ায়। এগুলো তারা করেছে বহির্বিশ্বকে এটা বোঝানোর জন্য যে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার চলে যাওয়ায় কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে। এই বিষয়টি সম্পূর্ণরুপে বুঝতে এবং আসলেই হিন্দুদের সাথে কি হচ্ছিলো সে সম্পর্কে জানতে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রমানিকের এই রিসেন্ট ইন্টারভিউটা দেখে আসতে পারেন (২৫ঃ৩০ মিনিট থেকে ৩৩ঃ৩০): https://youtu.be/Bn6dRfRjaR4?si=y7zLhrdi3Z3mk48y&t=1526
আর এদিকে আমাদের প্রতিবেশি ভারতে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুদের গনহত্যা চলছে, মহিলাদের গন ধর্ষণ হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদেশে কোথাও কোনো মাইনোরিটিদের গনহত্যা চলছে না। কোথায় হিন্দুদের শত শত লাশের সারি জমছে না। এদেশে যদি কোথাও গনহত্যা হয়, তবে সেটা হয়েছে এদেশের সরকার কর্তৃক ছাত্রদের উপর। এবং পরোক্ষভাবে এই গনহত্যায় সায় দিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। আপনাদের সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করে দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ করছি।
আমি হিন্দু বিদ্বেষী না, তবে ভারত বিদ্বেষী বলতেই পারেন। যেদেশে বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানোতে পুরো দেশ আনন্দে মেতে ওঠে সেদেশ আর যাই হোক, কোনোভাবেই অসাম্প্রদায়িক বা ধর্ম সহিষ্ণু হতে পারে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে বহুগুন এগিয়ে। মন্দির ভাঙ্গার ঘটনাগুলো শোনার পর ভারতীয়দের মতো আনন্দ উল্লাস বা বাহবা তো দূরের কথা, উল্টো দেশের সবাই উঠে পড়ে লেগেছে সেগুলো রক্ষা করতে।
যাইহোক, ভারত সরকার এখনও বাংলাদেশ ইস্যুকে নিজেদের সুবিধায় ব্যবহারের ধান্দায় আছে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের কেন্দ্র করে যে ভাঙচুর তার সঠিক মাত্রা জানতে চাইলে এক ভারতীয়ের তথ্যবহুল বিশ্লেষণ দেখতে পারেনঃ https://youtu.be/Z1O1KhGkjGg?si=dEBNVXwgukIqGqmW